সবসময় খুশি থাকার ১০ টি উপায়:
১. কৃতজ্ঞতা অনুশীলন করুন: আপনার জীবনের ভালো জিনিসগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ থাকার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার জীবনের ৫টি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
২. ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করুন: নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করুন এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনার চর্চা করুন।
৩. সুস্থ জীবনযাপন করুন: নিয়মিত ব্যায়াম করুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং পর্যাপ্ত ঘুমান।
৪. অন্যদের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করুন: পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং প্রিয়জনদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন।
৫. আপনার পছন্দের কাজ করুন: আপনার পছন্দের কাজগুলো করার জন্য সময় বের করুন।
৬. অন্যদের সাহায্য করুন: অন্যদের সাহায্য করলে আপনার মনে ভালো লাগবে।
৭. বর্তমান মুহূর্তে বাঁচুন: অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তা না করে বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দিন।
৮. প্রকৃতির সাথে সংযুক্ত থাকুন: প্রকৃতির সাথে সময় কাটানো আপনার মনকে শান্ত করতে পারে।
৯. ধ্যান অনুশীলন করুন: ধ্যান অনুশীলন করলে আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে পারবেন।
১০. নিজেকে মেনে নিন: আপনার ভুলগুলো মেনে নিন এবং নিজেকে ভালোবাসুন।
এই উপায়গুলো অনুসরণ করলে আপনি সবসময় খুশি থাকতে পারবেন।
মনে রাখবেন, খুশি থাকা একটি অভ্যাস। প্রতিদিন এই উপায়গুলো অনুশীলন করার চেষ্টা করুন।
আজকে আমরা সবসময় খুশি থাকার ১০ টি উপায় সম্পর্কে জানব। ”আমি সবসময় খুশি থাকতে চাই” এটি আমাদের সকলেরই কামনা। পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে খুশি থাকতে চায় না। সবাই চায় যে সে খুশি থাকুক। কিন্তু পরিবেশ পরিস্থিতির নানা জটিলতার মাঝে পড়ে আমরা অনেক সময় হাসতে ভুলে যাই। মানুষ সুখের জন্য তাদের কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলি পেতে চায়। সারাদিন ছুটতে থাকে সেগুলো পাবার জন্য।
কিন্তু দিন শেষে তারা তাদের অন্তরে গ্লানি, শূন্যতা আর হতাশা খুঁজে পায়। কারণ তারা খুশি আর সুখ পাবার জন্য ভুল জায়গায় সন্ধান করছে। বাইরের বস্তু সর্বদা ক্ষণস্থায়ী। আজ আছে তো কাল নেই। সেই বস্তুগুলির সাথে যদি আমরা আমাদের খুশি বা সুখী থাকাকে সংযুক্ত করি তাহলে সেই খুশিও বেশিদিন স্থায়ী হবে না। তাহলে কী এমন জিনিস আছে যা আমাদের সর্বদা খুশি অনুভব করাতে সাহায্য করতে পারে? এমন কী অনুশীলন করা যেতে পারে আজ সেটাই জানব –
১. নিজেকে ভালবাসতে শিখুন:-
জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো নিজেকে ভালোবাসতে শেখা। বলা হয়ে থাকে, ”যদি নিজেকে ভালোবাসতে না পারেন, তাহলে অন্যকেও ভালোবাসতে পারবে না।” সুখী বা খুশি থাকতে আমরা প্রায়শই নিজেদেরকে ভালোবাসতে বা সন্মান করতে ভুলে যাই। যারা আপনাকে ভালোবাসতে পারে না, মর্যাদা দিতে পারে না তাদের থেকে দূরে থাকুন। সেই সঙ্গে নিজের ভুল ও দূর্বলতাগুলি আলিঙ্গন করতে শিখুন। মনে রাখুন, প্রত্যেকের জীবনেই কম বা বেশি ভুল রয়েছে। এই পৃথিবীতে কেউ ভুলের উর্ধ্বে নয়। নিজেকে ছোট বা অপমান করবেন না।
মনে করুন, এই পৃথিবীটা একটা বড় ইউনিভার্সিটি আর আপনার জীবন একটা ক্লাসরুম। যেখান থেকে আপনি প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কিছু শিখতে পাচ্ছেন। ভুল করেছেন বলে চিন্তা করবেন না। নিজেকে ক্ষমা করে দিন বা যাদের নিকট ভুল বা অপরাধ করেছেন তদের নিকট ক্ষমা চেয়ে নিন। নতুন করে আবার শিখুন, নিজেকে ভালবাসুন । শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে ও আধ্যাত্মিকভাবে সর্বদা নিজের যত্ন নিন। কারন আজকের আপনিই পারবেন আগামী দিনের জন্য সেরা ও সকলের নিকট প্রশংসিত আপনাকে গড়ে তুলতে।
২. নিজেকে নিয়ে সময় কাটান:-
সারাদিন ব্যস্ত? নিজের সাথে সময় ব্যয় করবার সময় নেই? এক্ষুনি কিছুটা সময় খুঁজে বের করুন। দিনের কিছুটা সময় আমাদের নিজেদের জন্য একান্তই কাটানো উচিত। দিনের খানিকটা সময় চারপাশের ক্রমাগত নেতিবাচকতা থেকে নিজেকে বের করে আনার জন্য নিজের সাথে ভালো বোঝাপড়া থাকাটা খুব দরকার।
আমাদের মনই আমাদের চালিকাশক্তি। একটা পূর্ণ দিন বা একটা পূর্ণ সপ্তাহ হতে হবে না। শুধু কয়েকটা উষ্ণ মিনিট কাটান, সুন্দর কোনো প্রাকৃতিক জায়গায় গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু ভুলে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যান। দেখবেন নিজের ভিতরে একটা সুন্দর অনুভূতির ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে। নিজের জীবন সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়ে যাবেন। নিজের অবস্থান কোথায় রয়েছে, নিজেকে কতটুকু উন্নয়ন করতে হবে, নিজের জন্য কি প্রয়োজন? ইত্যাদি সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন শুধুমাত্র কিছু সময়ের বিনিময়ে।
৩. অল্পতে সন্তুষ্ট থাকুন:-
অন্যের কি কি আছে তা দেখে দুঃখ না পেয়ে বা Jealous Feel না করে আপনার যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকুন। আপনি যখন অন্যের কাছে থাকা ভাল বা তুচ্ছ বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারবেন তখন আপনার নিকট যা যা আছে তা মনে পড়বে না। নিজের নিকট এর চেয়ে আরও মূল্যবান বস্তু থাকা স্বত্তেও।
রাস্তার পাশে অনাহারে পড়ে থাকা শিশু, বৃদ্ধ মানুষগুলোকে দেখুন, যাদের মা বাবা নেই যারা ছোট থেকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে দু-মুঠো খাবার জোগাড় করে পেট চালায় তাদের কথা একটু ভাবুন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা মানুষগুলোর কথা ভাবুন। যাদের হাত পা নেই চলতে পারে না তাদের কথা ভাবুন। কিছু কিছু মানুষ আছে যারা আপনার দিকে তাকিয়ে আফসোস করে ইশ্ আমার জীবনটা যদি এরকম হতো তাহলে কতইনা ভালো হতো! এসকল বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ভাবুন। একটা সময় বুঝতে পারবেন আপনার জীবনটা কত সুন্দর, আপনার জীবনে আপনি কত সুখী।
৪. চাহিদা বা প্রত্যাশা কমিয়ে ফেলুন:-
আমরা প্রায়ই আমাদের চাহিদাগুলোকে আমাদের অবস্থানের বাইরে নিয়ে যাই। যেটার ফল পরিশেষে আমাদের জন্য বেদনাদায়ক হয়। আর এইটাই তো স্বাভাবিক। কেননা কষ্ট মানুষ তখনই পায় যখন নিজের ভাবনার সাথে বাস্তবতর মিল থকে না। নিজের সক্ষমতার অতিরিক্ত আশা করাটা ভুল। আর জেনে শুনে আমরা বার বার এই ভুলটাই করে বসি।
মনে করুন, আপনার নিকট ৫০০ টাকা আছে অপরদিকে আপনি ১০০০ টাকা মূল্যের কাপড় বা কোনো কিছু কিনতে চাচ্ছেন। কিন্তু এটা সম্ভবও নয়। তাই বলে কি আপনি কষ্ট পাবেন? যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে আমি বলব আপনি ভুল করছেন। আপনার উচিৎ হবে ৫০০ টাকা দিয়েই ভাল কোন কিছু কিনে নেওয়া। সহজ সমীকরণ! আর এই সমীকরণটি মাথায় গেঁথে ফেলুন তাহলেই আপনার জীবন আনন্দে ভড়ে উঠবে।
৫. জীবনে অফসোস করবেন না:-
আফসোস করাই হতাশার প্রধান কারন। আর আফসোসই আমাদের জীবনের সুখগুলোকে মুছে দিয়ে আমাদেরকে কষ্টের বন্যায় ফেলে দেয়। আমরা সাধারণত অনেকেই আফসোস করি। আফসোস নানা রকমের হয়ে থাকে যেমন- আমার ভাল চেহারা নেই, আমার ভাল মোবাইল নেই, আমি কেন ভাল স্টুডেন্ট নই, আমি কেন মোটা নই, আমার কেনো টাকা নেই, আমার কেনো এটা নেই, সেটা নেই ইত্যাদি ইত্যাদি….।
তবে আফসোস যে কারনেই হোক না কেন মনে রাখবেন, আফসোস কখনো আপনাকে ভালো থাকতে দিবে না। বার বার আপনাকে নিজের নিকট ছোট করে আবিষ্কার করবে। তাই আফসোস না করে আপনার সমস্যাগুলোকে ইতিবাচকভাবে নিন্তা করুন। আপনার হয়ত ভাল মোবাইল নেই কিন্তু আপনার ভাল একটি পরিবার রয়েছে, আপনার ভাল কিছু বন্ধু রয়েছে, আপনার ভাল বিষয়গুলোকে বার বার মনে করার চেষ্টা করুন। এভাবেই আফসোস গুলোকে ইতিবাচকে পরিণত করুন তাহলেই আপনি সুখি হতে পারবেন।
৬. নেতিবাচক মানুষ থেকে দূরে থাকুন:-
আপনি সকলকে একসাথে খুশি করতে পারবেন না, আপনি শুধুমাত্র আপনার সেরাটা দিয়ে যান। যদি আপনি মনে করেন যে, সকলকে আপনার উপর সন্তুষ্ট রাখবেন তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। মহামানব হযরত মুহাম্মদ (স.) সত্যের বাণী প্রচার করা স্বত্তেও সকলকে সত্যরে পথে নিয়ে আসতে পারেন নি। অতএব, আপনি যে কাজই করেন না কেনো আপনার বিপক্ষে কিছু মানুষ থাকবেই।
যদি আপনার জীবনে এমন কেউ থাকে যে, প্রতিনিয়ত আপনার কর্মকান্ডে নেতিবাচক দিক খুঁজে বেড়ায়। সর্বদা আপনাকে মানসিক টেনশনে রাখে। তাহলে তাকে এড়িয়ে চলুন। যারা আপনার চলার পথে বাঁধা দেয়, আপনার বিশ্বাসকে অমর্যাদা করে, আপনাকে অন্যের সামনে হেয় প্রতিপন্ন করে, তাদের থেকে সর্বদা দূরত্ব বজায় রাখুন। তবে তাদের কোনোরকম ক্ষতি করার প্রয়োজন নেই, সর্বদা তাদের জন্য মঙ্গল কামনা করুন।
৭. অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন:-
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হলে তা আমাদের স্বাভাবিক হার্টবিট এবং দেহের কার্যকর প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বজায় রাখতে ভীষনভাবে সাহায্য করে। প্রিয় খাবার খেলে কিংবা পছন্দের জায়গায় বেড়াতে গেলে আমরা আমাদের ভেতর যেমন আনন্দ খুঁজে পাই ঠিক তেমনই আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায় অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার মাধ্যমে।
যাদের পাশে কেউ নেই, যারা অসহায়, ঘর ছাড়া, যারা মৃত্যুমুখে শয্যাশায়ী কিংবা সব হারিয়ে যে জীবনের প্রতি বিমুখ তাদের সাথে কথা বলুন। যারা আপনাকে কিছু বলতে চায় তাদের কথা শুনুন । তাদের সমস্যার সমাধান যদি নাও করতে পারেন তবুও তাদের মানসকি শান্তি জোগাতে আপনি যথেষ্ট।
৮. অন্যকে সাহায্য করুন:-
নিজের মন থেকে স্বার্থহীনভাবে যখন আপনি অন্য কাউকে সাহায্য করবেন তখন অদ্ভুত এক ভাললাগা ও প্রশান্তি আপনার ভিতরে কাজ করবে। আমরা মূলত অন্যদের সাহায্য করার মাধ্যমে নিজেকেই সাহায্য করি। নিজের ভিতরে সুপ্ত থাকা সুন্দর অনুভূতিগুলিকে বের করে আনি। হতে পারে একজন বয়স্ক লোক রাস্তা পার হতে পারছে না। আপনি তার হাতটা ধরে রাস্তা পার করে দিলেন। কাজটি ছোট হলেও বয়স্ক লোকটির জন্য অনেক উপকার হবে আর এর প্রভাবে আপনার নিজের মনে আপনি প্রশান্তির ছোয়া পাবেন।
আপনার বাড়িতে যে লোকটা সারাদিন কাজ করে তার জন্য ছোট্ট কিছু উপহার কিনে দিলেন। আপনার আশেপাশে এরকম অনেক অভাবী ব্যাক্তি রয়েছে যাদের চাহিদা খুব বড় কিছু নয়। সামান্য কিছুর বিনিময়েই তাদের চাহিদা পূরণ হতে পারে। আর অপরদিকে আপনার নিকট সেই সামর্থ্যও রয়েছে। তাদের এইসকল চাহিদা পূরণের জন্য দরকার শুধু একটু সাহায্যের হাত। একটু-আধটু সাহায্য, দুটো ভালোমন্দ কথা, অন্যের মুখে হাসি ফোটালে আপনার মুখেও হাসি থাকবে সর্বক্ষণ।
৯. অতিমাত্রায় না ভেবে করে ফেলুন:-
আমরা নিজেদের মনের ভেতর অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করে মূল্যবান সময়গুলি নষ্ট করি শুধু এটা ভেবে যেটা আমি সবসময় করতে চেয়েছিলাম, সেটা করবো কী করবো না? এতোকিছু না ভেবে করে ফেলাই অতি উত্তম। যার যেটা ভালো লাগে, যেটা এতদিন স্বপ্নে পুষে রেখেছেন তা আজ করে ফেলুন। জীবন খুবই ছোট। এজীবনে কখন কী হবে তা কেউ বলতে পারে না। তাই যে কাজগুলো নিজেকে ভিতর থেকে খুশি রাখতে পারে তা আজই করে ফেলুন।
১০. Social Media থেকে কিছুটা সময় সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকুন:-
ব্যাস্ত এ জীবনের ক্লান্তি দূর করতে কাজের ফাকে একটু সময় পেলেই আমরা ইউটিউবে ভিডিও দেখা, ফেসবুক, ট্যুইটার, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদিতে ডুবে পরি। এসবের পিছনে আমরা যতটা সময় ব্যায় করি সেই সময়টা যদি আমরা নিজেদের প্রতি ব্যায় করতাম তাহলে জীবন আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারত।
অন্যের স্ট্যাটাস, অন্যের বেড়াতে যাওয়ার ছবি, পোষ্ট আমাদের মধ্যে অনেকের মনে নেতিবাচক ভাবনার জন্ম দেয়। প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করেছে ঠিকই কিন্তু এর লাগাম ছাড়া ব্যাবহার কেড়ে নিয়েছে সামাজিক মূল্যবোধ, সৌন্দর্য ও সৌহার্দ্য। তাই যতটা ব্যবহার না করলেই নয় ততটা ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। জীবনকে আনন্দময় করে গড়ে তুলন।