Site icon Kabinbd Blog

করোনা চলে যাক, সুফল আসুক প্রতি ঘরে

করোনা চলে যাক, সুফল আসুক প্রতি ঘরে

আপনার এই সুন্দর প্রত্যাশার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। করোনা ভাইরাস আমাদের জীবনে অনেক অসুবিধা, দুঃখ ও বেদনা এনেছে। অনেক মানুষ তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, অনেকে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমরা সকলেই চাই এই মহামারী যেন দ্রুত শেষ হয় এবং আমাদের জীবনে আবার সুখ ও সমৃদ্ধি ফিরে আসে।

করোনা থেকে মুক্তি পেতে এবং প্রতি ঘরে সুফল আনতে আমাদের সকলকেই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে:

আমি আশা করি, আমরা সকলেই যদি একসাথে কাজ করি, তাহলে আমরা অচিরেই করোনা থেকে মুক্তি পাব এবং প্রতি ঘরে সুফল আনতে পারব।

এই কঠিন সময়ে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং সাহসী হতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহ্‌ আমাদের এই পরীক্ষা থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার তৌফিক দান করবেন।

আমাদের সকলের জন্য শুভকামনা রইল।

kabinbd

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের পথে—প্রথম আলোয় প্রকাশিত এই খবরে আশার সৃষ্টি হচ্ছে। পরীক্ষায় সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামা, মৃত্যুসংখ্যাও গত মাসের তুলনায় বেশ কমে আসা থেকে আশা করাই যায় যে আমরা করোনার শ্বাসরোধী বদ্ধ–গুমোট ঘরে একটা খোলা জানালা পাচ্ছি, যেখান থেকে আসছে উজ্জীবনের হাওয়া। বাংলাদেশে এ বছরের ফেব্রুয়ারির শেষে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে গিয়েছিল। এরপর আবার বাড়তে থাকে, প্রধানত ভাইরাসের ডেলটা ধরনের কাছে। একসময় প্রতি চার দিনে এক হাজারজনের মৃত্যু পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলেছিল। সে সময়ে ভারতের করোনা গ্রাফ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাফল্যের কাহিনি থেকে আমরা পূর্বাভাস করেছিলাম যে সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশেরও করোনা গ্রাফ নিচের দিকে নেমে যাবে। যদিও প্রথম আলোর ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রকাশিত রিয়াদুল করিমের প্রতিবেদনেই সতর্কতাবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মাস্ক পরতে হবে এবং টিকাদানের অভিযান রাখতে হবে জোরদার। প্রথম আলোতেই বাসস পরিবেশিত আরেক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে মোট ৩ কোটি ৯০ লাখ ডোজের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ২ কোটি ৩৫ লাখ ১৩ হাজার ৩৬২ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ কোটি ৫৫ লাখ ১৮ হাজার ৫৩৪ জন। আরও টিকা আসছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা হলে আর সংক্রমণপ্রবণ এলাকা, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, শিল্প এলাকা, শহর এলাকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকার আওতায় আনা গেলে হয়তো ছয় কোটি মানুষকে পূর্ণ টিকা দেওয়ার মাধ্যমেই আমরা করোনা
নিয়ন্ত্রণে বিশাল অগ্রগতি দেখাতে পারব।
এরই মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আংশিকভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে। কলকারখানা-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগে থেকেই চালু। যানবাহনও চলছে। হাটবাজার খুলে গেছে। পর্যটন এলাকাগুলো সরগরম। আশা করা যায়, দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা দেবে, কর্মচঞ্চল বাংলাদেশের পরিশ্রমী মানুষেরা নিজেদের দেড় থেকে দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দ্বিগুণ পরিশ্রম করবেন, যা দেশের অর্থনীতিতেই রক্তসঞ্চালন করবে। উন্নত দেশগুলোও নতুন উদ্যমে কাজে-কর্মে-উৎসবে-আনন্দে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ফলে আমাদের দেশ থেকে রপ্তানি বাড়বে। এরই মধ্যে তৈরি পোশাকের কর্মাদেশ বাড়ার খবর আমরা পাচ্ছি। আরও অনেক রপ্তানি খাতেই সুখবর আসবে বলে আশা করা যায়। জনসংখ্যা রপ্তানিতে যে মন্দা প্যানডেমিকের কারণে তৈরি হয়েছে, তা কেটে যাবে। সব মিলিয়ে করোনাকালীন কিংবা করোনা-উত্তর সময়টা বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য ভালো যাবে—এই আশায় আমরা বুক বাঁধতেই পারি।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, করোনার ঝড় আমাদের ওপর দিয়ে অনেক বড় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে, তার চিহ্ন জনপদে জনপদে বিরাজমান। দারিদ্র্য বেড়ে গেছে, বহু মানুষ নতুন করে নেমে গেছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। স্কুল বন্ধ থাকায় বহু ছেলেমেয়ে চিরকালের জন্য স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে। শিশুশ্রম বেড়েছে। পরিবহনশ্রমিক, হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক–কর্মচারী, বেসরকারি স্কুল-কলেজ-কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক–কর্মচারী, বহু গাড়িচালক, পর্যটন খাতের ওপর নির্ভর করা মানুষেরা কীভাবে যে প্যানডেমিকের সময়টা পার করেছেন, তা কেবল ভুক্তভোগীরাই জানেন। এই খাতের মানুষগুলোকে কীভাবে সাহায্য করা যায়, তার জন্য আমাদের অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, নীতিনির্ধারকেরা বসে একটা বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেবেন, সরকার যেন পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে সামনে এগিয়ে নিয়ে আসতে পারে, সে ব্যাপারে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হবে, এই হলো আমাদের প্রত্যাশা।
আমরা জানি, করোনার প্রকোপ একেবারে শেষ হয়ে যায়নি, সর্বজনীন টিকা দেওয়ার পরই কেবল আমরা চূড়ান্ত সাফল্যের কাছাকাছি যেতে পারি। তবু করোনাভাইরাস একেবারে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে বলে কেউ আশা করছেন না। করোনার সঙ্গেই আমাদের বসবাস করতে হবে। তবে আপাতত করোনা-উত্তরকালের স্বপ্ন আমরা দেখছি, আর সেটা কেবল স্বপ্ন হিসেবে দুচোখে পুষে না রেখে বাস্তব কর্মপরিকল্পনা হিসেবেই আমাদের প্রণয়ন করতে হবে।

স্কুলগুলোতে মিড-ডে মিলের যে কর্মসূচি করোনার আগের দিনগুলোতে শুরুর কথা হচ্ছিল, মুজিব বর্ষে যা শ্রেষ্ঠ একটা কর্মসূচি হিসেবে পরিগণিত হতে পারে, তা ভালোভাবে শুরু করে দেওয়া দরকার। বাংলাদেশের শিশুরা এখনো প্রচণ্ড পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। স্কুলে নিয়মিত গরম ডিম–খিচুড়ির মতো পুষ্টিকর খাবার দেওয়া গেলে তা স্কুলে উপস্থিতি বাড়াবে, আবার পুষ্টিহীনতা দূর করতেও সাহায্য করবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের বারবার করে মনে রাখতে হবে আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের সেই প্রতিশ্রুতির কথা, স্বাধীনতার সুফল এই দেশের গরিব–দুঃখী মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে, এ দেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। আমাদের দেশে মাথাপিছু আয় বাড়ছে, কিন্তু তা ধনী-গরিবের বৈষম্যকেও প্রকট করে তুলছে। আমাদের দেশে কোটিপতির উৎপাদনও বাড়ছে, টাকা পাচারকারীদের উৎপাদনও বাড়ছে। বৈষম্য দূর করার অঙ্গীকার আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের অঙ্গীকার, সেই বৈষম্য যেমন শ্রেণির সঙ্গে শ্রেণির, তেমনি এক অঞ্চলের সঙ্গে আরেক অঞ্চলেরও।

২০২২ সালে বাংলাদেশে অর্থনীতির নানান সূচকে অনেক ভালো করবে, তা আমরা আশা করতেই পারি। সেই ভালোত্বটুকুন নিয়ে যেতে পারতে হবে ১৬ কোটি মানুষের প্রত্যেকের ঘরে। আমাদের উন্নয়নের প্রধান বলি হয় কৃষিজমি, আমাদের নদ-নদী-পানি, আমাদের মাটি, আমাদের আকাশ, আমাদের বাতাস, আমাদের পরিবেশ। উন্নয়নের গাড়ি যখন ছুটতে শুরু করে, তখন লোভ-লুণ্ঠন-দুর্নীতি-অনিয়ম-অনৈতিকতাও চারদিকে মত্ত হাতির মতো ছুটে আসে। আমাদের উন্নয়ন হোক
এপ্রিল থেকেই করোনার প্রকোপ বেড়ে গেলে দুশ্চিন্তার মেঘ জমেছিল আশার দিগন্তে। সেপ্টেম্বরে এসে মনে হচ্ছে, মেঘ কেটে যাচ্ছে। আসছে আলোকিত দিন।

এই সময়টায় যেমন আমরা আশায় বুক বাঁধব, এই সময়টাতেই আমরা পরিকল্পনাও গ্রহণ করব। ব্যবস্থা নেব। পদক্ষেপ নেব। আবার বলি: আমরা চাই: ১. করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষগুলোকে সামনে এগিয়ে আনতে বিশেষ কর্মসূচি। ২. স্কুলে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে এবং পুষ্টিহীনতা দূর করতে মিড–ডে মিল চালু। ৩. দুর্নীতি-লুণ্ঠন-টাকা পাচার এবং অনৈতিকতা রোধে কঠোর পদক্ষেপ। ৪. আমাদের উন্নয়নদর্শন হোক মানবিক এবং পরিবেশবান্ধব।

দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসছে—এই সুখবর উদ্‌যাপনের মুহূর্তে আমাদের করণীয়গুলোও যেন আমরা ভুলে না যাই।
বাংলাদেশের প্রধান শক্তি হলো এ দেশের মানুষ। এই দেশের মানুষের সৃজনশীলতা। যেকোনো নতুন ধারণা, আবিষ্কার, প্রযুক্তিকে মেনে নেওয়ার উদারতা। বাংলাদেশের মানুষ কোভিড প্রতিরোধক টিকা নিচ্ছেন আগ্রহভরে, লাইন দিয়ে। আমেরিকা-কানাডার মতো দেশে নাগরিকেরা টিকা নিতে চাইছেন না। নানা কুসংস্কার, রাজনৈতিক বৃত্তাবদ্ধতা আমেরিকার মতো উন্নত দেশের নাগরিকদের বিপুল অংশকে করোনার টিকা নেওয়া থেকে বিরত রাখছে। আমাদের দেশে কিন্তু সমস্যা নেই বললেই চলে। এই দেশের মানুষ অতীতের অনেক দুর্যোগের মতো করোনা দুর্যোগেও বাংলাদেশকে হারতে দেয়নি, হারতে দেবে না।

করোনার সংক্রমণ কমে যাচ্ছে—এই সুখবর আমাদের মনে শান্তির স্পর্শ বুলিয়ে দিচ্ছে যখন, তখন এই প্রতিজ্ঞাতেও আমাদের রাষ্ট্রচালকেরা নিজেদের শাণিত করুন, দুর্যোগ-উত্তর দিনগুলোর সুযোগের সুফল আমরা পৌঁছে দেব ঘরে ঘরে। মুক্তিযুদ্ধের সেই গানের মতো করে: বাংলার প্রতি ঘর ভরে দিতে চাই মোরা অন্নে। অন্নে, স্বাস্থ্যে, শিক্ষায়, বাসস্থানে, আলোয়।

patri com bd

আপনি যদি বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে থাকেন তবে
লিংকে ক্লিক করে ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করুন
অথবা বিস্তারিত জানতেঃ
Gmail:kabinbd4@gmail.com
01711462618 এ কল করুন ২৪/৭ সার্ভিস

Exit mobile version