বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয় কেন?
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয় কেন?
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে:
আইনি স্বীকৃতি: বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আপনার বিবাহকে আইনিভাবে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে আপনি বিবাহিত দম্পতি হিসেবে বিভিন্ন আইনি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
আইনি স্বীকৃতি বলতে বোঝায় কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বা ঘটনাকে আইনের চোখে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে স্বীকার করা। আইনি স্বীকৃতির বিভিন্ন রূপ রয়েছে, যেমন:
- বিবাহ: বিবাহ রেজিস্ট্রেশন দম্পতিদের আইনিভাবে বিবাহিত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
- জন্ম: জন্ম নিবন্ধন একজন শিশুর আইনিভাবে জীবিত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
- মৃত্যু: মৃত্যু সনদ একজন ব্যক্তির আইনিভাবে মৃত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
- ব্যবসা: কোম্পানি নিবন্ধন একটি ব্যবসাকে আইনিভাবে স্বীকৃতি দেয়।
- সম্পত্তি: সম্পত্তির মালিকানা আইনিভাবে স্বীকৃত হতে হবে।
আইনি স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি:
- অধিকার ও সুবিধা প্রদান করে: আইনি স্বীকৃতি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বা ঘটনাকে বিভিন্ন অধিকার ও সুবিধা ভোগ করার সুযোগ করে দেয়।
- নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রদান করে: আইনি স্বীকৃতি সমাজে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- বিরোধ নিষ্পত্তি করে: আইনি স্বীকৃতি বিরোধ নিষ্পত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আইনি স্বীকৃতি না থাকলে:
- ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বা ঘটনাটি আইনের চোখে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য হবে না।
- তারা বিভিন্ন অধিকার ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।
- তারা সমাজে বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হতে পারে।
আইনি স্বীকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, এবং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আপনার যদি আইনি স্বীকৃতি সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে একজন আইনজীবীর সাথে পরামর্শ করুন।
উত্তরাধিকার: সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নির্ধারণে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন থাকলে আপনার স্ত্রী/স্বামী এবং সন্তানরা আপনার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
নারীর অধিকার: বিবাহ রেজিস্ট্রেশন নারীর অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন থাকলে একজন নারী তার স্ত্রীধন, ভরণপোষণ এবং অন্যান্য অধিকার আদায় করতে পারবেন।
সন্তানের অধিকার: বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সন্তানের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিবাহ রেজিস্ট্রেশন থাকলে একজন সন্তান তার পিতামাতার নাম, সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার এবং অন্যান্য অধিকার ভোগ করতে পারবে।
সামাজিক স্বীকৃতি: বিবাহ রেজিস্ট্রেশন আপনার বিবাহকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে আপনি সমাজে একজন সম্মানিত বিবাহিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিতি পাবেন।
প্রশাসনিক সুবিধা: বিবাহ রেজিস্ট্রেশন থাকলে আপনি বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে সুবিধা পাবেন, যেমন: পাসপোর্ট তৈরি, ভোটার আইডি কার্ড তৈরি, ইত্যাদি।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন একটি সহজ এবং সরল প্রক্রিয়া। আপনি আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কার্যালয়ে গিয়ে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
তাই, আপনার বিবাহের আইনি ও সামাজিক স্বীকৃতি নিশ্চিত করার জন্য আজই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করুন।
“বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয় কেন?” প্রশ্নটির উত্তর অতি ব্যাপক। সংক্ষেপে, সামাজিক মর্যাদা এবং আইনগত অধিকার রক্ষার জন্যই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা অতি জরুরি। রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত আপনি আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারেন। মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ বা বিয়ে রেজিস্ট্রেশন একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে সাক্ষ্যগত মূল্য বহন করে। রেজিস্ট্রেশন ব্যতীত বিবাহ প্রমাণ করা কঠিন ফলে মেয়েদের প্রতারিত হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় সবচেয়ে বেশি। দেনমোহর, ভরণপোষণ, উত্তরাধিকার নির্ণয়, সন্তানের অভিভাবকত্ব ইত্যাদি দাবির ক্ষেত্রে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বা বিবাহের কাবিননামা আইনগত দলিল হিসেবে বিবেচিত হয়। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে কাবিননামার গুরুত্ব ব্যাপক। কাবিননামায় বয়স উল্লেখ করতে হয় বিধায় বাল্য বিবাহ রোধও সম্ভব। এটি বিবাহিত ছেলে-মেয়ে উভয়ের ভবিষ্যৎ আইনগত অধিকার সংরক্ষণ করে। বিবাহ সম্পর্কে উভয় পক্ষ থেকেই যে কোন সময় জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে, তখন কাবিননামা প্রমাণ পত্র হিসেবে কাজ করে।
অন্যদিকে, আইনের দৃষ্টিতে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তাই সকল বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা আইনত আবশ্যক।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বলতে আসলে কি বুঝায়?
বিবাহ রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে সরকারিভাবে বিবাহকে তালিকাভুক্ত করা। সরকারের নির্ধারিত ফরমে বিবাহের তথ্যবলী দিয়ে এই তালিকাভুক্ত করতে হয়। তালিকাভুক্ত ফরমটিকে কাবিননামাও বলে। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন অনুযায়ী প্রতিটি বিবাহ সরকার নির্ধারিত কাজী বা নিকাহ্ রেজিস্টার দ্বারা রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইনটি ২০০৫ সালে সংশোধনী আনা হয় এবং বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।ওই সংশোধনীতে বলা হয়েছে, নিকাহ্ রেজিস্টার বা কাজী বিবাহ সম্পন্ন হবার সঙ্গে সঙ্গেই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করবেন অথবা তিনি ছাড়া অন্য কেউ বিবাহ সম্পন্ন করলে ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ্ রেজিস্টার বা কাজীর নিকট বিবাহের তথ্য প্রদান করতে হবে এবং কাজী উক্ত তথ্য প্রাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন। যদি কেউ বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের এসব বিধান লঙ্ঘন করেন তাহলে তার ২ (দুই) বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৩০০০ (তিন হাজার) টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। আইন অনুযায়ী কেউ যদি রেজিস্ট্রেশন বিষয়ে ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন তবে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
উল্লেখ্য যে, রেজিস্ট্রেশন না হলে বিবাহ বাতিল হয় না তবে আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হবার সম্ভাবনা থাকে।
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও ১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ এ্যাক্ট অনুযায়ী খ্রিস্টানদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে হিন্দু পারিবারিক আইন অনুযায়ী হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের কোনও বিধি বিধান নেই। তবে ২০১২ সালে প্রণীত “হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন” অনুযায়ী বিবাহ নিবন্ধনের বিধান থাকলেও তা বাধ্যতামূলক করা হয়নি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রেও এরূপ বিধান নেই। এসব ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে হলফনামা করে রাখা যেতে পারে।
কখন এবং কিভাবে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয়?
২০০৫ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) সংশোধিত আইন অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন হবার সাথে সাথে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। তবে নিকাহ রেজিস্ট্রি ছাড়া বিবাহ সম্পন্ন হলে ৩০দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্টারের নিকট বিবাহ রেজিস্ট্রি করতে হয়। রেজিস্ট্রি করতে রেজিস্ট্রেশন সরকারি ফি দিতে হয়। দেনমোহরের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারিত হয়। ধার্য্যকৃত দেনমোহরের প্রতি হাজার বা তার অংশ-বিশেষের জন্য ১০ টাকা হারে রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হয়। তবে রেজিস্ট্রেশন ফি এর মোট পরিমাণ ১০০ টাকার কম হবে না এবং ৪০০০ টাকার উপর হবে না। এই ফি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এবং পরিবর্তন হয়ে থাকে। রেজিস্ট্রেশন ফি পরিশোধের দায়িত্ব বরপক্ষের।আইন অনুযায়ী বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় বা শর্ত যেমন, বর কনের বয়স, উভয়ের সম্মতি, দেনমোহর, তালাক প্রদানের ক্ষমতা ইত্যাদি পূরণ সাপেক্ষে কাজী বা নিকাহ রেজিস্টার বিবাহ রেজিস্ট্রি করবেন। খ্রিস্টান বিবাহের ক্ষেত্রে যিনি বিবাহ সম্পাদন করবেন তিনিই বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করবেন। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবার পর কাজী উভয়পক্ষকে রেজিস্ট্রেশন ফরম বা কাবিননামার সত্যায়িত কপি প্রদান করবেন।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের সুফল-কুফল :
আইনি সুফল:
- বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি প্রদান করে।
- স্ত্রী/স্বামীর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নিশ্চিত করে।
- সন্তানের জন্ম নিবন্ধন সহজ করে।
- বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে আইনি সুবিধা প্রদান করে।
- পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তিতে সহায়তা করে।
সামাজিক সুফল:
- পারিবারিক ও সামাজিক স্বীকৃতি প্রদান করে।
- নারীর ক্ষমতায়নে সহায়তা করে।
- बाल विवाह रोकथाम में सहायता करता है।
- দায়িত্বশীল ও টেকসই বিবাহের সংস্কৃতি তৈরি করে।
অর্থনৈতিক সুফল:
- বিভিন্ন সরকারি সুবিধা ও প্রণোদনা ভোগ করার সুযোগ করে দেয়।
- ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক সহায়তা পাওয়া সহজ করে।
- সম্পত্তির লেনদেনে সুবিধা প্রদান করে।
বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের কুফল:
ব্যক্তিগত কুফল:
- কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হতে পারে।
- বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের প্রক্রিয়া জটিল ও সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
- দুর্নীতির ঝুঁকি থাকতে পারে।
সামাজিক কুফল:
- কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক রীতিনীতি ও ঐতিহ্যের সাথে সংঘাত হতে পারে।
- সমাজের কিছু অংশে ভুল ধারণার কারণে বিবাহ রেজিস্ট্রেশনকে নकारात्मकভাবে দেখা হতে পারে।
অর্থনৈতিক কুফল:
- বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের জন্য কিছু খরচ হতে পারে।
- দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষের ক্ষেত্রে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা কঠিন হতে পারে।
উপসংহার:
বিবাহ রেজিস্ট্রেশনের সুফল অবশ্যই কুফলের চেয়ে বেশি। তাই সকলের উচিত তাদের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন করা।
আপনার যদি বিবাহ রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে, তাহলে আপনার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন।
২) রেজিস্ট্রেশনের ফলে সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নির্ণয় সহজ হয়।
৩) স্ত্রী তার প্রাপ্ত দেনমোহর ও ভরণপোষণ আদায় বা দাবি করতে পারে।
৪) সন্তানের অভিভাবকত্ব নির্ণয় করতে সহজ হয়।
৫) স্বামী দ্বিতীয় বিবাহের জন্য উদ্যোগী হলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।
৬) রেজিস্ট্রেশনের ফলে বাল্য বিবাহ রোধ সম্ভব হয়।
৭) রেজিস্ট্রেশনের ফলে স্ত্রী ডিভোর্স দেয়ার ক্ষমতা প্রাপ্ত হতে পারে।
অন্যদিকে, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন না হলে স্বামী বা স্ত্রীর আইনগত বৈধতা প্রমাণ করা কষ্টসাধ্য, অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করা যায় না। রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার ফলে স্বামী অথবা স্ত্রী উভয়ই আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত বা প্রতারিত হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আবার, রেজিস্ট্রেশন না করা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধও বটে। মোদ্দাকথা কথা, বিবাহ রেজিস্ট্রেশন একদিকে যেমন বাধ্যতামূলক অন্যদিকে এটি একটি সামাজিক এবং পারিবারিক প্রামাণ্য দলিল।
https://kabinbd.co/home/registration