সুখি পরিবার গঠনে না জানা কথা
সুখী পরিবার গঠনে না জানা কথা
সুখী পরিবার গঠনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমরা জানি। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে যেগুলো আমরা সবসময় খেয়াল রাখি না।
এখানে কিছু না জানা কথা তুলে ধরা হলো:
১) ভালোবাসার প্রকাশ:
- শুধু মুখে “ভালোবাসি” বললেই হবে না।
- স্পর্শ, সময়, উপহার, সেবা, এবং প্রশংসার মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করা জরুরি।
- সঙ্গীর ভালোবাসার ভাষা বুঝে তাকে সেভাবে ভালোবাসা প্রকাশ করা।
২) কৃতজ্ঞতা:
- সঙ্গীর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
- ছোট ছোট কাজের জন্যও ধন্যবাদ জানানো।
- কৃতজ্ঞতার অনুভূতি সুখী সম্পর্কের মূল ভিত্তি।
৩) ক্ষমাশীলতা:
- মানুষ ভুল করে।
- ক্ষমাশীল হওয়া এবং সঙ্গীকে ক্ষমা করার মনোভাব থাকা।
- ক্ষমা দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৪) ব্যক্তিগত জীবন:
- সঙ্গীর ব্যক্তিগত জীবন ও স্পেসকে সম্মান করা।
- নিজের ব্যক্তিগত জীবন ও আগ্রহ বজায় রাখা।
- স্বাধীনতা ও ভারসাম্য সুখী সম্পর্কের জন্য প্রয়োজন।
৫) বন্ধুত্ব:
- সঙ্গীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।
- একসাথে মজা করা, হাসি-খুশি সময় কাটানো।
- বন্ধুত্ব ভালোবাসার সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।
৬) যোগাযোগ:
- নিয়মিত খোলামেলা আলোচনা করা।
- মনের কথা, আবেগ, এবং চাহিদা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা।
- ভালো যোগাযোগ ভুল বোঝাবুঝি দূর করে।
৭) সমস্যা সমাধান:
- সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা আসবেই।
- শান্তিপূর্ণ ও সহযোগিতামূলকভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা।
- ঝগড়া না করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে বের করা।
৮) পরিবর্তন গ্রহণ:
- মানুষ ও সম্পর্ক সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়।
- পরিবর্তন গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকা।
- পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানো সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখে।
৯) পেশাদার সাহায্য:
- প্রয়োজনে একজন থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।
- পেশাদাররা সম্পর্কের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে পারে।
পরিবারের সুখ-শান্তির ওপর নির্ভর করে প্রতিটি মানুষের সুখ। অনেকেই জীবনের অধিকাংশ সময় পার করে পরিবারের সবাইকে সুখী রাখার জন্য। কিন্তু এতকিছু করেও সুখ উপভোগের সময় কখন যে হারিয়ে যায় তা বুঝতে পারে না অনেকেই। সুখী পরিবার গড়ে ওঠার পেছনে সব থেকে বড় শর্ত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। শুধু অর্থ উপার্জন করে ঘরে নিয়ে আসলেই পরিবারের সদস্যদেরকে সুখী করা যায় না। একদল গবেষক কয়েকটি পরিবারকে পর্যবেক্ষণ করে খুঁজে বের করেছেন কিভাবে গড়ে ওঠে সুখী পরিবার।
কিভাবে গড়ে তুলবেন সুখী পরিবার:
১। যে কোনো পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় সঙ্গীর পাশে বসুন। বিজ্ঞানীদের মতে, কারো সঙ্গে কথা বলার সময় পাশে বসে কথা বললে কথোপকথন সহযোগিতাপূর্ণ হয়। মুখোমুখি বা আড়াআড়ি বসলে ততটা হয় না। আর সঙ্গীর সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক সুখী পরিবারের প্রথম শর্ত।
২। সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলার সময় ডিম লাইটের আলো জ্বেলে নিন।
গবেষণায় দেখে গিয়েছে ডিম লাইটের হালকা আলোতে মানুষ আরামদায়ক এবং নিরাপদ বোধ করে এবং ওই সময়টায় কথোপকথন খোলামেলা হওয়ায় বিশ্বাস গড়ে ওঠে। আর বিশ্বাস সুখী পরিবার গড়ে তোলায় শর্ত।
৩। পরিবারের বর্তমান প্রজন্মকে পরিচয় করিয়ে দিন তার পূর্বসূরীর সঙ্গে। গবেষণায় দেখা যায়, যে বাচ্চারা পূর্বসূরীদের সাফল্য এবং ব্যর্থতার গল্প জানে তারা বেশি স্থিতিস্থাপক এবং চাপের প্রভাবে নিজেকে সংশোধন করতে সক্ষম।
৪। সন্তানকে তার দাদা-দাদীর সঙ্গে বড় করুন।
বিবর্তনবাদী নৃ-তত্ত্ববিদ সারাহ ব্লাফার হার্ডি বলেছেন, দাদা-দাদী বা নানা-নানী প্রজন্ম হচ্ছে পরিবারের ওস্তাদ সম্প্রদায়। এদের সঙ্গে বেড়ে ওঠা শিশুরা অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়। ৬৬টি গবেষণা এনালাইসিস করে দেখা যায়, যে পরিবারের শিশুরা তার মা ও দাদীর সঙ্গে বেড়ে উঠেছে, পরবর্তী জীবনে তাদের অবসাদের মাত্রা অনেক কম।
৫। রাতে খাবার টেবিলে বসে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে দিনের ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে কথা বলুন। যে পরিবারে খাবার টেবিলে দিনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক ঘটনা নিয়ে আলোচনা করা হয় সে পরিবারের শিশুরা বাস্তব জীবন সম্পর্কে ভালো ধারণা ছোটবেলাতেই পায় এবং তাদের মধ্যে সহমর্মিতা ও অন্যান্য নৈতিক গুণাবলি তৈরি হয়।
৬। লড়াকু মানসিকতার হউন।
জেসন ম্যাককার্থি বলেন, কিছু মুহূর্ত আসবে যখন পরিবারের প্রয়োজনগুলোর সঙ্গে নিজের প্রয়োজনের সংঘাত ঘটবে তখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে অথবা একটি বিকল্প পথ বের করতে হবে। আর তখনই আপনার মধ্যে বিশ্বস্ততা তৈরি হবে এবং পরিবার আপনার ওপর নির্ভর করবে। এভাবেই নির্ভরতা, বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে গড়ে উঠে সুখী পরিবার।
৭। পরিবারের সবাই সবার কাজ ভাগ করে নিন।
একটি তালিকা করে সেখানে তিনটি কলাম রাখুন, ‘কি করতে হবে’, ‘কতটুকু করেছি’, এবং ‘কি কি করা হয়েছে’। পরিবারের যে-ই কাজ হাতে নিবে সে এই তিনটি কলাম মেনে চলে পরিবারকে জানাবে কাজটির এখন কি অবস্থায় আছে। এতে করে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরি হবে।
৮। সব কিছুতেই না বলার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
সুখী পরিবারের অন্যতম শর্ত, নমনীয় হওয়া। যেকোনো সিদ্ধান্ত ভেবে পরিবারকে জানাতে হবে। তবে সরাসরি না বলা উচিত নয়। এতে করে পরিবারের সবার মধ্যে শান্তি বজায় থাকে।
৯। পরিবারের উচিত শিশুদের সঙ্গে সময় কাটানো, তাদের সঙ্গে খেলাধূলা করুন। তবে খেলার সময় তাদের কখনো বলবেন না তুমি এটা পারোনি বা পারবে না বরং তাদের বলুন ‘আমি জানি তুমি এটা পারবে।’ এতে করে শিশুর মনে আত্নবিশ্বাস গড়ে ওঠে।
১০। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে সময় কাটান।
নিয়ম করে পরিবারের সবাই একসঙ্গে আড্ডা দিন। হয়ত খাবার টেবিলে নয় ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে সবাই মতামত ভাগাভাগি করুন। যদি সমস্যাগুলো নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আলোচনা না করেন তবে পরিবারের উন্নতির কোনো পরিকল্পনা নেই। আর এই পরিবারই তৈরি করে দিবে নিরাপদ পরিবেশ।
১১। আমি বলা পরিহার করুন।
সব বিষয়েই আমরা বলতে অভ্যস্ত হোন। এতে করে পরিবারের একাত্বতা প্রকাশ পায়। যা সুখী পরিবার গড়ে তোলার অন্যতম শর্ত।
১২। সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৮ টার মধ্যে কোনো কঠিন সিদ্ধ্বান্ত নেয়া থেকে বিরত থাকুন। শিকাগোর দুই মনোবৈজ্ঞানির মতে, এই দুই ঘন্টা সব থেকে চাপের সময়। সারাদিনের কাজের পর পরিবারের সকল সদস্যের শরীর ক্লান্ত হয়ে পরে এ সময়। তাই এই সময় নেয়া সিদ্ধান্ত ভালো ফলাফল বয়ে আনতে পারে না।
১৩। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যে কোনো তর্ক হলে তা তিন মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করুন। কেননা ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির জন গটম্যানর গবেষণা থেকে জানা যায় যে কোনো যুক্তিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো প্রথম তিন মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তারপর সকলেই উচ্চ স্বরে নিজের আগের কথাই পুনরাবৃত্তি করে।
পরিবার সুখি হবার জন্য আমরা মোহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর জীবনী থেকে আমরা বেশ কিছু উদাহরন নিতে পারি।
স্ত্রীর প্রশংসা : রাসুল (সা.) স্ত্রীদের প্রশংসা করার মধ্যে কোনো কমতি করতেন না। বরং ভরপুর মজলিসে প্রশংসা করতেও কুণ্ঠাবোধ করতেন না। যেমন একবার ইরশাদ করেন, ‘খাদিজার প্রতি আমার প্রচণ্ড ভালোবাসা রয়েছে। ’ (মুসলিম, হা. ২৪৩৫)
এক পাত্রে পান করা :
বর্ণিত আছে, ‘হজরত আয়েশা (রা.) পেয়ালার যেখানে মুখ রেখে পান করতেন, রাসুল (সা.) সেখানে মুখ রেখে পান করতেন এবং একই হাড্ডির গোশত আয়েশা (রা.) খেয়ে রাসুল (সা.)-এর হাতে দিলে রাসুল (সা.) সেখান থেকেই খেতেন, যেখান থেকে আয়েশা (রা.) খেয়েছেন। ’ (নাসাঈ, হা. ৭০)
একসঙ্গে গোসল করা :
বর্ণিত আছে, ‘রাসুল (সা.) এবং হজরত মাইমুনা (রা.) একই সঙ্গে একই মগ দিয়ে একই পাত্রের পানি দিয়ে গোসল করেন। ’ (নাসাঈ, হা. ২৪০)
সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করা : রাসুল (সা.) স্ত্রীদের সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করতেন। একদিন হজরত ছাফিয়াহ (রা.) হুজুর (সা.)-এর সঙ্গে ইতিকাফকালীন সাক্ষাতের জন্য আসেন, সাক্ষাৎ শেষে ফিরে যাওয়ার সময় রাসুল (সা.) তাঁকে একটু এগিয়ে দেন। (বুখারি, ১/২৭৩)
পারস্পরিক মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ :
আমাদের সমাজে পারিবারিকভাবে নারীদের যেহেতু বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, তাই গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাপারে তাদের সঙ্গে পরামর্শ বা তাদের মতামত জানার চেষ্টাও করা হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের মতামত গ্রহণ করা হলেও তা আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত স্বামী গ্রহণ করবে আর বেগম সাহেবা শুধু শুনে থাকবে আর মেনে চলবে—এটাই তার একমাত্র দায়িত্ব! অথচ রাসুল (সা.)-এর অবস্থা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি শুধু পারিবারিক বিষয়েই নয়, প্রয়োজন হলে উম্মতের ব্যাপারেও স্ত্রীদের পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করতেন এবং তা বাস্তবায়ন করতেন। যেমন হুদাইবিয়ার সন্ধি সম্পাদন হওয়ার পর রাসুল (সা.) সাহাবাদের বলার পরও যখন তাঁরা ব্যথিত হয়ে ভগ্নহূদয়ের কারণে কোরবানি এবং হলক (মাথা মুণ্ডানো) কোনোটাই করলেন না, তখন রাসুল (সা.) মনঃক্ষুণ্ন হয়ে তাঁবুতে প্রবেশ করেন এবং হজরত উম্মে সালমা (রা.)-এর সঙ্গে এ ব্যাপারে পরামর্শ করেন। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী রাসুল (সা.) নিজের কোরবানি ও হলক সম্পাদন করলে সাহাবায়ে কেরামও নিজেদের কোরবানি ও হলক সম্পন্ন করে নেন। (বুখারি, ১/৩৮০)
পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা :
ঘরের কাজকর্মে স্ত্রীদের সহযোগিতা করার প্রতি পুরুষদের কোনো আগ্রহ নেই বললেই চলে। অনেকে আবার এটাকে মানহানিকর মনে করে থাকে। ছোট ছোট বিষয়ে তারা স্ত্রীনির্ভর হয়ে থাকে। হায় রে মান রে! অথচ রাসুল (সা.) ঘরের কাজকর্মে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। হজরত আয়েশা (রা.)-কে একদিন জিজ্ঞেস করা হলো, রাসুল (সা.) ঘরে কী কাজ করতেন? হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ঘরের কাজকর্মে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। ’ (মিশকাত, ৩৫১৯)
অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, ‘রাসুল (সা.) নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন। নিজেই নিজের জুতা মেরামত করতেন। ঘরে যেসব কাজ পুরুষরা করে থাকে, রাসুল (সা.)ও সেসব কাজ নিজেই করতেন। ’ (মিশকাত, ৫২০)
স্ত্রীর মনোরঞ্জন ও বিনোদনমূলক কাজে অংশগ্রহণ :
মানুষের স্বভাবজাত বিষয় হলো, সে অবিরাম কাজের ফলে ক্লান্ত হয়ে ওঠে, কাজের প্রতি অনীহাভাব চলে আসে। এমতাবস্থায় ক্লান্তি দূর করতে প্রয়োজন একটু বিনোদনের যেন নবোদ্যমে জীবনের পথচলা শুরু করা যায়। ইসলাম যেহেতু মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম, তাই মানুষের স্বভাবজাত চাহিদা বিনোদনের প্রতি আকর্ষণ পূরণ করার জন্য শরিয়তের গণ্ডির মধ্য থেকে জায়েজ এবং বৈধ পন্থায় প্রশান্তি ও প্রফুল্লতা লাভ করার যাবতীয় পথ উন্মুক্ত রেখেছে। স্বয়ং রাসুল (সা.) শুধু প্রকাশ্যে নয়, নির্জনেও উম্মাহাতুল মুমিনীনের সঙ্গে বিনোদন করেছেন এবং নিজের পারিবারিক জীবনকে সব রকম কলহ-বিবাদমুক্ত পুষ্পবাগানে পরিণত করেন। যেমন—একবার হাবশি কিছু লোক মসজিদে নববীর সামনে যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছিল, তখন রাসুল (সা.) নিজের পক্ষ থেকেই হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি তাদের মহড়া দেখতে আগ্রহী? হজরত আয়েশা (রা.) হ্যাঁসূচক উত্তর দিলে রাসুল (সা.) ঘরের দরজায় আয়েশাকে চাদর দিয়ে আড়াল করে দাঁড়িয়ে যান। আর আয়েশা (রা.) রাসুলের পেছনে দাঁড়িয়ে তাঁর কাঁধ ও কান মুবারকের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা দিয়ে তাদের মহড়া দেখতে থাকেন। আয়েশা (রা.) নিজে নিজে প্রস্থান না করা পর্যন্ত রাসুল (সা.) এভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। (বুখারি, হা. ৫১৯০)
ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে সমস্যার সমাধান :
স্বাভাবিক জীবনের মতো পারিবারিক জীবনও উত্থান-পতনের মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হয়। কথার ফুলঝুরির মধ্যেও এমন কথা শুনতে হয়, যা গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। কিন্তু রাসুল (সা.) যদি কোনো উম্মুল মুমিনীনের মুখে অসংলগ্ন কোনো কথা শুনতেন, তাহলে তাঁকে ধমকানো বা তিরস্কার করা ছাড়া দার্শনিক পন্থায় এমনভাবে ভুল সংশোধন করে দিতেন, যেন সংশোধনও হয়ে যায়, আবার মানসিকভাবে ভেঙেও না পড়ে। এমনই একটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো—‘একদিন রাসুল (সা.) ঘরে তাশরিফ নিয়ে দেখেন, হজরত ছফিয়্যাহ (রা.) কান্নাকাটি করছেন। রাসুল (সা.) তাঁকে কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হাফসা (রা.) আমাকে ইহুদির বাচ্চি বলে গালি দিয়েছেন। এ কথা শুনে রাসুল (সা.) তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, এর মধ্যে দোষের কী আছে? বরং এর মধ্যে তো এমন সম্মান রয়েছে, যা আল্লাহ তাআলা একমাত্র তোমাকেই দিয়েছেন। তুমি হাফসাকে বলে দাও যে আমার স্বামী নবী, আমার বাবা নবী এবং আমার চাচাও নবী। অতএব আমার সঙ্গে তুমি কিসের বড়াই করো। এরপর হাফসাকে লক্ষ্য করে বলেন, হাফসা! আল্লাহকে ভয় করো। ’ (তিরমিজি, হা. ৩৮৯৪)
অহেতুক সন্দেহ পরিহার করা
বৈবাহিক জীবনে বিশ্বাসঘাতকতামূলক সন্দেহ (যেমন পরকীয়া) এমন একটি বিষয়, যার কল্পনাও যেকোনো স্বামীর জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। এটা এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়, যা একজন নম্রভদ্র ব্যক্তিকেও ক্রোধান্বিত করে। কখনো কখনো অতিমাত্রায় রাগের কারণে অত্যন্ত ভয়ানক পদক্ষেপও গ্রহণ করে ফেলে। অর্থাৎ তালাকের মাধ্যমে সম্পর্ক ছিন্ন করে। এ ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন স্বয়ং রাসুল (সা.) হয়েছেন। ইতিহাসের পাতায় যা ইফকের ঘটনা নামে প্রসিদ্ধ। মুনাফিকদের অপবাদের কথা রাসুল (সা.)-এর কানে পৌঁছলে তিনি মিম্বরে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, ‘হে মুসলমানগণ! আমার পরিবারের ব্যাপারে কিছু কষ্টদায়ক কথা আমার কানে পৌঁছেছে। আল্লাহর কসম! আমি তাঁর (আয়েশার) ব্যাপারে ভালো ছাড়া অন্য কিছু জানি না। ’ এরপর সরাসরি হজরত আয়েশা (রা.)-এর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন এবং বলেন যে আমার কানে তোমার ব্যাপারে এমন এমন কথা পৌঁছেছে, তুমি যদি এই অপবাদ থেকে মুক্ত হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে এর থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যদি তোমার দ্বারা এ-জাতীয় কোনো কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তিগফার করো। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা হজরত আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতা বর্ণনা করে পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। (বুখারি, ২/৫৯৫-৫৯৬)
(মাওয়ায়েজে ফকীহুল মিল্লাত অবলম্বনে)
ব্যক্তিগত কাজে স্বাধীনতা
: মহানবী (সা.) স্ত্রীদের ব্যক্তিগত বৈধ কাজে তাদের স্বাধীনতা দিতেন। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি ছোট মেয়েদের সঙ্গে খেলা করতাম। নবী (সা.)-এর পাশে আমার কিছু বান্ধবী ছিল, যারা আমার সঙ্গে খেলত। যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রবেশ করতেন তারা পর্দা ব্যবহার করত এবং তিনি তাদের আমার জন্য ছেড়ে দিতেন, যাতে তারা আমার সঙ্গে খেলা করে। ’ (বুখারি, হা. ৬১৩০)
স্বামী-স্ত্রীর গোপনীয়তা রক্ষা :
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেক গোপন কথা থাকে। তা প্রকাশ করা সমাজে লজ্জাজনক। মহানবী (সা.) এ ব্যাপারে মহান পথপ্রদর্শক। কখনো তিনি নিজের পরিবারের ত্রুটি জনসমক্ষে প্রকাশ করতেন না। নিজেই তার সমাধান দিতেন। আবদুর রহমান ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত আবু সায়িদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি হবে সেই পুরুষ, যে তার স্ত্রীর সঙ্গে গোপন কথা বলে, অতঃপর তা ফাঁস করে দেয়।’ (মুসলিম, হা. ১৪৩৭)
মহানবী (সা.) স্ত্রীদের প্রহার করতেন না :
স্ত্রীদের প্রহার করতে পারা আমাদের সমাজের এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। অথচ তা লজ্জাজনক কাজ। যার সঙ্গে রাত্রিযাপন হবে, তার সঙ্গে কিভাবে ঝগড়ায় লিপ্ত হওয়া যায়! রাসুলুল্লাহ (সা.) এ ব্যাপারে খুব সতর্ক ছিলেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো নিজের হাতে কোনো স্ত্রী ও খাদেমকে প্রহার করেননি। যুদ্ধ ছাড়া তিনি নিজের স্বার্থে কারো থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। আল্লাহর বিধানের অসম্মানের কারণ ছাড়া তিনি কখনো প্রতিশোধ নিতেন না।’ (মুসলিম, হা. ২৩২৮)
আপনি যদি বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে থাকেন তবে
লিংকে ক্লিক করে ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করুন
অথবা বিস্তারিত জানতেঃ
Gmail:kabinbd4@gmail.com
01711462618 এ কল করুন ২৪/৭ সার্ভিস