পরিবারের খারাফ আচরনে কি করবেন

0
57
kabinbd

পরিবারের খারাপ আচরণের কারণে আপনি যদি মানসিকভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, হতাশার শিকার হন, অথবা নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেন, তাহলে এই সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন:

প্রথমত, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করুন:

  • কারণ: পরিবারের সদস্যদের আচরণের কারণ বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের আচরণের পেছনে কোনো নির্দিষ্ট কারণ আছে কিনা তা জানুন।
  • প্রভাব: তাদের আচরণ আপনার উপর কী প্রভাব ফেলছে তা স্পষ্টভাবে বুঝুন।
  • আপনার ভূমিকা: এই পরিস্থিতিতে আপনার ভূমিকা কী তা ভেবে দেখুন।

দ্বিতীয়ত, সমাধানের পন্থা খুঁজুন:

  • আলোচনা: পরিবারের সদস্যদের সাথে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করুন। তাদের আচরণ আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করছে তা তাদের বুঝিয়ে বলুন।
  • সীমানা নির্ধারণ: আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সীমানা নির্ধারণ করা জরুরি। কোন আচরণ আপনি সহ্য করবেন না তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন।
  • পেশাদার সাহায্য: পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে একজন মনোবিজ্ঞানী বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।

কিছু টিপস:

  • শান্ত থাকুন: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলেও শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। রাগান্বিত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
  • নিজের যত্ন নিন: পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে।
  • নিজের জন্য সময় বের করুন: পরিবারের বাইরে নিজের জন্য কিছু সময় বের করুন। আপনার পছন্দের কাজগুলো করুন।
  • বন্ধু ও পরিবারের সাহায্য নিন: আপনার বন্ধু ও পরিবারের সাথে কথা বলুন। তাদের সাহায্য ও সমর্থন আপনাকে এই কঠিন সময় পার করতে সাহায্য করবে।

মনে রাখবেন, আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের দায়িত্ব আপনারই। পরিবারের খারাপ আচরণের কারণে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।

আপনি পছন্দ করুন বা না করুন, খারাপ আচরণের মানুষ সমাজের সর্বত্রই রয়েছে।

এটি নিশ্চিত যে, জীবনের কোনো না কোনো এক পর্যায়ে আপনি কোনো চ্যালেঞ্জিং ব্যক্তির

মুখোমুখি হবেন এবং তাদের  সাথে মোকাবিলা করার উপায় আপনাকেই খুঁজে বের করতে হবে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে হতে পারে আপনার পরিবারের সদস্যরাই আপনার সাথে খারাপ আচরণ করছে।

এক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? আপনিও তাদের মতই খারাপ আচরণ করবেন? নাকি ধৈর্য্য সহকারে  কোনোভাবে তাদের আচরণকে পরিবর্তনের চেষ্টা করবেন?

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কখনই আপনি তাদের সাথে খারাপ আচরণ করতে পারবেন না, যদিও তারা আপনার সাথে খারাপ আচরণ করুক।

কিভাবে এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন সে নিয়েই আজকের নিবন্ধের আলোচনা।

পরিবারের সাথে ভাল ব্যবহারের গুরুত্ব

পরিবারের সঙ্গে সুস্থ ও ভালোবাসাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য সদ্ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু আপনার সুখের জন্যই জরুরি না, বরং পুরো পরিবারের কल्याণের জন্যও প্রয়োজনীয়।

সদ্ব্যবহারের ইতিবাচক প্রভাব:

  • আস্থা ও নিরাপত্তা: (পরিবারের) সদস্যদের মধ্যে সদ্ব্যবহার একটি নিরাপদ ও আস্থাভিত্তিক পরিবেশ তৈরি করে। এতে সবাই নিজেদের মতামত ও অনুভূতি খোলামেলাভাবে প্রকাশ করতে পারে।
  • সম্মান ও মর্যাদা: সদ্ব্যবহার একে অপরের সম্মান ও মর্যাদা বজায় রাখে। এটি সবার মধ্যে মূল্যবোধের অনুভূতি জাগে।
  • সহযোগিতা ও সমর্থন: (পরিবারের) সদস্যরা যখন একে অপরের প্রতি সদ্ব্যবহার করে, তখন তারা একে অপরকে সহযোগিতা ও সমর্থন করে। এতে করে যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সহজ হয়।
  • মানসিক স্বাস্থ্য: সুস্থ ও ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি সদস্যদের stre (স্ট্রেস) কমায় এবং আत्मবিশ্বাস বাড়ায়।
  • মজবুত সম্পর্ক: সদ্ব্যবহার পরিবারের বন্ধনকে আরও মজবুত করে। এতে সদস্যদের মধ্যে ভালোবাসা, স্নেহ ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

কিভাবে পরিবারে সদ্ব্যবহার বৃদ্ধি করা যায়:

  • শ্রদ্ধা দেখান:  (পরিবারের) সব সদস্যকে, বয়স বা অবস্থান নির্বিশেষে, শ্রদ্ধা দেখান।
  • মধুর কথাবার্তা: একে অপরের সাথে মধুর ও সম্মানসূচক ভাষায় কথা বলুন। কটু কথা এড়িয়ে চলুন।
  • সহानুভূতিশীল হওয়া: অন্যের কষ্ট বুঝুন এবং সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
  • ধন্যবাদ জানান:   (ছোট) কিছু করলেও একে অপরকে ধন্যবাদ জানান। এতে সবার মধ্যে কৃতজ্ঞতার भाव (ভাব) জাগে।
  •   (গুণ) স্বীকার করা:  (পরিবারের) সদস্যদের ভালো দিকগুলোকে স্বীকার করুন এবং তাদের প্রশংসা করুন।
  • ক্ষমা করা:  (মানুষের) ছোটখাটো ভুলত্রুটি সবারই হয়। ক্ষমাশীল হওয়া এবং একে অপরকে ক্ষমা করা জরুরি।

ইসলামে পরিবার আয়না সদৃশ। এই আয়নায় ফুটে ওঠে ইসলামের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ।

ফলে বিরাজ করে শান্তি ও ভালোবাসা। তাই পারিবারিক জীবনে আচরণ কেমন হবে সে সম্পর্কে কুরআন ও

সুন্নাহর দিকনির্দেশনা জানা না থাকলে কিভাবে পরিবারে শান্তি বিরাজ করবে?

পরিবার গঠনে ইসলামের সর্বপ্রথম দিকনির্দেশনা হচ্ছে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের সঙ্গে ন্যায় ও

শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করা। আল্লাহ বলেন, “আর তোমরা তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করো।” (৪:১৯)

কথাবার্তা ও কাজকর্ম সুন্দরভাবে সম্পাদন করা, সদা হাসিমুখে পরিবারের আনন্দ-বিনোদনে অংশীদার

হওয়া ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করলে পরিবার শান্তির ঠিকানায় পরিণত হবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া

সাল্লাম বলেন, “তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। আর

তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।” (তিরমিযী)

 কারও কোনো আচরণ অপছন্দ হলে তার পছন্দনীয় কোনো দিকও অবশ্যই থাকবে। তাই রাসুল সাল্লাল্লাহু

আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “কোনো মুমিন পুরুষ যেন মুমিন নারীর প্রতি ক্রোধান্বিত না হয়। তার

কোনো আচরণ অপছন্দ হলে অন্য আচরণ দেখে তার প্রতি সন্তুষ্ট হবে।” (সহিহ মুসলিম)

তাই পরিবারের কারও সামান্য মন্দ আচরণেই তার অন্য গুণাবলি মাটিচাপা দেওয়া উচিত নয়।

সুদৃঢ় ঈমান ও সৎ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবারের ভিত্তি মজবুত হয় আর সবার মাঝে তৈরি করে ভালোবাসা ও মায়া-মমতা।

তবে পরিবারের কেউ যদি মন্দ আচরণ করে, তখন তার সাথে কিরুপ আচরণ করবেন সে সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলঃ

কঠিন স্বভাবের মানুষকে শুধরানোর চেষ্টা করবেন না

তাদের আচরণ যেমন ঠিক তেমনভাবেই তাদেরকে গ্রহণ করুন। এটি  শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের

ক্ষেত্রেই  নয় বরং সমস্ত কঠিন স্বাভাবের মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। কঠিন স্বভাবের মানুষকে নিজ চেষ্টায়

শুধরাতে গেলে  হিতে বিপরীত হতে পারে। এর থেকে ভাল সে আপনার সাথে কঠিন আচরণ করলেও

আপনি  তার প্রতি নম্র  আচরণই  করুন।

বারবার  আপনার থেকে নম্র আচরণ পেতে থাকলে, হতে পারে

একসময় তার অন্তর আপনার প্রতি বিগলীত হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের বিনম্র

আচরণ থেকে আপনি শিক্ষাগ্রহণ করুন। আয়েশা রাযিঃ তাঁর সম্পর্কে বলেন, “নবীজি কখনও তাঁর নিজের

জন্য কারও থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেন নি (বরং, তিনি সবাইকে মাফ করে দিতেন)।”

রাগারাগি করা থেকে বিরত থাকুন

কঠিন স্বভাবের মানুষ সর্বদাই রাগ দেখায়, ঝগড়াটে মনোভাবে কথা বলে, কথা বলার অন্যকে কষ্ট দিয়ে

ফেলে। তার এই আচরণে আপনি কষ্ট পেলেও ঝগড়া এড়াতে আপনি তার মন্দ আচরণের উপর সবর

করুন এবং তার সাথে নম্র আচরণ করুন, ধীরে কথা বলুন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি হকের উপর থেকেও ঝগড়া পরিত্যাগ করে আমি তাঁর জন্য

জান্নাতের কিনারায় একটি ঘরের জিম্মাদারী নিচ্ছি।” অন্তত এই মূল্যবান হাদিসটিকে স্মরণ করে হলেও

আপনি তার সাথে রাগারাগি ও ঝগড়া করা থেকে বিরত থাকুন।

কঠিন স্বভাবের ব্যক্তিকে নিজের মত প্রকাশের জন্য উৎসাহ দিন

কোনো বাধা / বিরোধ / সমস্যা ছাড়াই তাদেরকে নিজের মতামত সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করতে দিন। তারা কেন

অন্যের দ্বারা সমালোচিত বোধ করে? মানুষ কি তাদের সম্পর্কে ভুল বোঝে? তারা অন্যদের কাছ থেকে কী

চায় বা আশা করে? এ প্রশ্নগুলো আপনি নিজেকে করুন আর তার জন্য এর উত্তরগুলি খুজে দেওয়ার চেষ্টা

করুন। তাকে যদি স্বাধীনভাবে তার সকল মত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয়, তার দুর্ব্যবহারের পরও যদি

তাকে আপন করে নেওয়া হয়, তবে নিঃসন্দেহে এটি তার স্বভাব পরিবর্তনে সাহায্য করবে।

  খারাফ আচরন থেকে বাঁচতে হলে

খারাপ আচরণ থেকে বাঁচতে হলে, আপনাকে সচেতন থাকতে হবে এবং কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রথমত, খারাপ আচরণ কী তা বুঝুন:

  • কোন আচরণগুলো আপনার জন্য অস্বস্তিকর বা ক্ষতিকর?
  • এই আচরণগুলো আপনার মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর কী প্রভাব ফেলে?
  • কোন পরিস্থিতিতে এই আচরণগুলো বেশি দেখা যায়?

দ্বিতীয়ত, সীমানা নির্ধারণ করুন:

  • আপনার জন্য কোন আচরণ গ্রহণযোগ্য তা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিন।
  • আপনার সীমানা লঙ্ঘন করলে দৃঢ়ভাবে “না” বলতে শিখুন।
  • ক্ষমাশীল হলেও, বারবার আপনার সীমানা লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবেন না।

তৃতীয়ত, সাহায্য নিন:

  • পরিবার, বন্ধু, অথবা বিশ্বস্ত কোন ব্যক্তির কাছ থেকে সাহায্য ও সমর্থন নিন।
  • প্রয়োজনে একজন মনোবিজ্ঞানী বা থেরাপিস্টের সাহায্য নিন।
  • আপনার আশেপাশের আইনি ও সামাজিক সহায়তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানুন।

কিছু টিপস:

  • আত্মবিশ্বাসী হোন: আপনার আত্মবিশ্বাস খারাপ আচরণকারীদের দূরে রাখতে সাহায্য করবে।
  • নিজের যত্ন নিন: পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, এবং নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করবে।
  • নিজের জন্য সময় বের করুন: নিজের পছন্দের কাজগুলো করুন।
  • শান্ত থাকুন: খারাপ আচরণের সম্মুখীন হলেও শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। রাগান্বিত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

মনে রাখবেন, আপনার নিরাপত্তা ও মানসিক স্বাস্থ্যের দায়িত্ব আপনারই। খারাপ আচরণের কারণে আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হলে দ্রুত পদক্ষেপ নিন।

মানুষের মধ্যে সৃষ্টিগতভাবে ভালো কাজের প্রবণতা যেমন আছে, তেমনটি আছে মন্দ কাজের প্রবণতা। সে যখন বিবেক দিয়ে ভালো-মন্দের পার্থক্য করতে সক্ষম হয় এবং হৃদয় দিয়ে সত্য-মিথ্যাকে উপলব্ধি করতে পারে তখন সে হয় সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ জীব। পক্ষান্তরে যখন তার মধ্য থেকে এ বৈশিষ্ট্য লোপ পায় তখন সে বনের হিংস্র জন্তু-জানোয়ার ও গৃহপালিত পশুর থেকেও নিকৃষ্ট জীবে পরিণত হয়।

ইসলামে সুন্দর আচরণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত পরিষ্কার। আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমের মাধ্যমে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুন্দর আচরণ শিক্ষা দিয়েছেন। নবী সুন্দর আচরণের মাধ্যমে পথহারা, দিশাহারা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন। তাদেরও শিক্ষা দিয়েছেন উত্তম আচরণ।

সুন্দর আচরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়।

যারা সবসময় মানুষের সঙ্গে ভালো কথা বলে, সুন্দর আচরণ করে তাদের সমাজের, দেশের সবাই অত্যন্ত পছন্দ করে, ভালোবাসে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। আল্লাহতায়ালাও তাদের অত্যন্ত পছন্দ করেন। একটি ভালো কথা, সুন্দর আচরণ একটি ভালো গাছের মতো। সুন্দর আচরণকারীর সামনে-পেছনে মানুষ তার প্রশংসা করে। তার জন্য মন খুলে দোয়া করে। ফলে আল্লাহ এবং আসমান-জমিনের ফেরেশতারাও তাকে অত্যন্ত পছন্দ করে।

অপরদিকে খারাপ ব্যবহারে সম্পর্ক বিনষ্ট হয়। অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। সমাজের মানুষ তাকে অবহেলা, অবজ্ঞা ও ঘৃণার চোখে দেখে। তার কথার কোনো দাম দেয় না।

আল্লাহ তা’আলা বলেন :

‘আর আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য বহু জিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে কিন্তু তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, কিন্তু তা দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে কিন্তু তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্ট। তারাই হল গাফেল (শৈথিল্য পরায়ণ)।’ (সূরা আ’রাফ: ১৭৯)

আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে বিবেক দিয়েছেন; কু-প্রবৃত্তি দেননি।

পশুদেরকে কু-প্রবৃত্তি দিয়েছেন; বিবেক দেননি। আর মানুষকে কু-প্রবৃত্তি ও বিবেক উভয়টি দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের বিবেক যখন তার কু-প্রবৃত্তির উপর প্রাধান্য পায়, তখন সে ফেরেশতাদের ঊর্ধ্বে চলে যায়। আর যখন তার কু-প্রবৃত্তি বিবেকের উপর প্রাধান্য পায়, তখন সে জন্তু-জানোয়ারের নিম্ন স্তরে নেমে যায়।

যা হোক, মানুষের মধ্যে নানা ধরণের পশুত্বের স্বভাব বিদ্যমান রয়েছে। যেমন: হিংস্রতা, নির্মমতা, বদ মেজাজি, অন্যের অধিকার হরণ, হালাল-হারামের তওয়াক্কা না করা, যৌন চাহিদা পূরণে নীতি-নৈতিকতার পরোয়া না করা, নির্লজ্জতা, অত্যাচার-নিপীড়ন করা ইত্যাদি। এগুলো হল পশুত্বের স্বভাব।

নিম্নে খারাপ আচরণ থেকে বাঁচার ১২ উপায় তুলে ধরা হল :

১. অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি জাগ্রত করা এবং বিবেক দিয়ে ন্যায়-অন্যায় ও সঠিক-বেঠিক পার্থক্য করা। সত্যিকার অর্থে যার মধ্যে বিবেক ও মানবিক মূল্যবোধ আছে সে একটু চিন্তা করলেই ন্যায়-অন্যায় বুঝতে পারে। এটা আল্লাহ প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য যা তিনি মানুষের মধ্যে দান করেছেন।

২. ইসলামের জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর ইবাদত করা। দু’আ, তাসবিহ ও আজকারসমূহ পাঠে অভ্যস্ত হওয়া। বিশেষ করে জামাআতে সলাত আদায়ে যত্নশীল হওয়া। আল্লাহর ইবাদত গুজার বান্দার মধ্যে মানবিক গুণাবলি বিকশিত হয়, সে অন্যের অধিকারের ব্যাপারে সচেতন থাকে এবং কখনো কারোও প্রতি অবিচার করতে পারে না।

৩. ইসলামের দৃষ্টিতে উন্নত স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা এবং সে গুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটানো।

৪. শয়তানের পক্ষ থেকে মনের মধ্যে সৃষ্ট কুমন্ত্রণা বশত: পশুত্বের মনোভাব, পাপাচার ও অন্যায় অপকর্ম করার কু-বাসনা জাগ্রত হলে সাথে সাথে ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শয়তানির রাজীম’ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) পাঠ করা এবং খারাপ চিন্তাভাবনা থেকে মনকে ফিরিয়ে আনা।

৫. নিয়মিত তরজমা-তাফসির সহ কুরআন পড়া ও হাদিস স্টাডি করা এবং অথেনটিক সোর্স থেকে ইসলাম সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা। কারণ জ্ঞান হল আলো। যার কাছে জ্ঞানের আলো থাকে সে নিজের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো দেখতে পায়, খারাপ বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং উন্নত চরিত্র এবং মানবিক গুণাবলী বিকশিত করতে সক্ষম হয়।

৬. আল্লাহওয়ালা, তাকওয়াবান ও আমলদার আলেমদের উপদেশমূলক বক্তব্য শোনা। কেননা উপদেশ দ্বারা মু’মিন উপকৃত হয়।

৭. ভালো লোকদের সংস্রবে থাকা এবং খারাপ ও পশু সুলভ আচরণে অভ্যস্ত লোকদের সাথে বন্ধুত্ব না করা। কেননা কথায় আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’

৮. আত্ম সমালোচনার মাধ্যমে নিজের মধ্যে পশুসুলভ আচরণ, খারাপ স্বভাব ও দোষ-ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করা।

৯. মহান আল্লাহর কাছে খারাপ চরিত্র, পশু সুলভ আচরণ ইত্যাদি থেকে বাঁচার জন্য এবং উন্নত ও সুন্দর চরিত্রে চরিত্রবান হওয়ার জন্য দু’আ করা।

১০. ইয়াতিমদের মাথায় হাত বুলানো এবং তাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব নেয়া। ইয়াতিমদের মাথায় হাত বুলালে বা তাদের প্রতি যত্ন নিলে অন্তরে নম্রতা সৃষ্টি হয় এবং নিজের মধ্যে দয়া, মমতা, পরোপকার ইত্যাদি মানবিক গুণাবলী জাগ্রত হয়।

১১. বিপদগ্রস্ত ও কঠিন রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে দেখতে যাওয়া। এটি মানুষের মধ্যে নিজের ব্যাপারে নতুন উপলব্ধি সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

১২. যানাজায় অংশগ্রহণ ও কবর জিয়ারত করা। এতে নিজের মৃত্যু, শেষ পরিণতি, কবরের শাস্তি, আখিরাতের ভয়াবহতা, জাহান্নামের আগুন ইত্যাদি স্মরণ হয় এবং হৃদয়ে নিজেকে সংশোধনের আত্মোপলব্ধি সৃষ্টি হয়।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তম চরিত্র ও আচার-আচরণ অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেও শিখিয়ে গেছেন। দোয়া করতে উৎসাহিত করে যাওয়াই প্রমাণ করে চরিত্র ও আচার-ব্যবহারকে ক্রমাগতভাবে উন্নত করার সুযোগ রয়েছে। তিনি যে দোয়া করেছেন তার মর্মার্থ হচ্ছে, ‘হে আমার প্রভু! আমাকে উত্তম চরিত্রের পথে ধাবিত করুন। আপনি ছাড়া আর কেউ সেদিকে ধাবিত করার নেই। আর আমাকে অসৎ চরিত্র ও আচরণ থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। আপনি ছাড়া তা থেকে দূরে সরানোর আর কেউ নেই।

matchmaking service

marriage media

matrimony service

আপনি যদি বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াস হয়ে থাকেন তবে
লিংকে ক্লিক করে ফ্রী রেজিষ্ট্রেশন করুন
অথবা বিস্তারিত জানতেঃ
Gmail:kabinbd4@gmail.com
01711462618 এ কল করুন ২৪/৭ সার্ভিস

Kabinbd Blog

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here